চা পাতার ব্যবসা শুরু করার আগেCategoriesচা পাতার ব্যবসা চা পাতার মার্কেট

চা পাতার ব্যবসা শুরু করার আগে

চা পাতার ব্যবসা শুরু করার আগে যা দেখতে হবে

চা পাতার ব্যবসার দিকে বর্তমানে নতুন নতুন উদ্দ্যোক্তারা ঝুকে পড়তেছে। বেশিরভাগ উদ্দ্যোক্তা বা ব্যবসায়ি চা পাতার ব্যবসা শুরু করার আগে মার্কেট রিসার্চ করে না। আবার অনেক নতুন ব্যবসায়ি ও উদ্দ্যোক্তা চা পাতার ব্যবসা শুরু করার পর মার্কেট থেকে ঝড়ে পড়ে যায়। এসবের অনেক কারন রয়েছে,  সে বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা করা হবে। লেখাটি চা ব্যবসায়িদের জন্য অনেক ভাল কিছু উপহার দিবে। আশাকরি মনোযোগ সহকারে লেখাটি পড়বেন।

চা পাতার ব্যবসা শুরু করার আগে


আপনি যদি নতুন ব্যবসা হিসেবে চা পাতার ব্যবসা বেছে নেন তাহলে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমানের মার্কেটিং ধারনা থাকতে হবে। এছাড়া আপনি কোন ব্রেন্ডের চা পাতার ডিলারশীপ নিয়ে মার্কেটিং করে ব্যবসা করবেন সেটাও ভালকরে জানতে হবে। এছাড়া সেসব কোম্পানি বা টি হাউজের বিএসটিআই লাইসেন্স, ট্রেডমার্ক,  টি বোর্ড লাইসেন্স আছে কিনা সে বিষয়গুলো ও মূল কাগজপত্র  দেখবেন। এছাড়াও আপনি নিজের অবস্থান দেখবেন যে_ ঐ কোম্পানি বা টি হাউজ থেকে চা পাতা ক্রয় করে বিক্রি করতে পারবেন কিনা।

আপনার এলাকা নির্বাচন করুন ও দেখুন

চা পাতার ব্যবসা শুরু করা আগে আপনি আপনার এলাকার চা স্টলগুলো পরিদর্শন করুন ও আপনি দেখুন কতগুলো চা পাতার ব্রান্ডিং রয়েছে আপনার এলাকায় এবং তারা কি দামে মার্কেট এ চা বিক্রি করতেছে। আর অবশ্যই একটি বিষয় লক্ষ করবেন তা হলো আপনার এলাকায় কোন সাইজের চা পাতা চলে। উল্ল্যেখ যে_ বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, থানা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সাইজের চা পাতা চলে তাই এটা দেখা আপনার গুরত্বপূর্ণ। চলুন টেবিল এ বিভিন্ন এলাকার চা পাতার বর্ণনার কিছু অংশ দেখি।

কোন বিভাগে কোন চা চলে

বিভাগের নাম : চায়ের গ্রেড বা প্রকার

  • রংপুর বিভাগ:  বিওপি, ওএফ ডাস্ট
  • রাজশাহী বিভাগ : সিডি ডাস্ট,  ডাস্ট
  • খুলনা বিভাগ : সিডি ডাস্ট,  আর ডি,  ডাস্ট
  • বরিশাল বিভাগ : পিডি,  জিবিওপি,  ডিএম
  • ময়মনসিং বিভাগ : পিএফ, ওএফ, জিবিওপি
  • সিলেট বিভাগ : বিওপি, জিবিওপি, পিডি
  • ঢাকা বিভাগ : বিওপি,  ডিএম, জিবিওপি, পিডি
  • চট্রগ্রাম বিভাগ : বিওপি, জিবিওপি

উপরের টেবিলে সব থেকে বেশি চা চলে এমন ধারনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এগুলো টি স্টল এ চলমান চা কিন্তুুু বাসা-বাড়ি ও অফিসে অন্য চা যেমনঃ বিওপি, জিবিওপি, ওএফ, পিএফ চা ও টি ব্যাগ সব থেকে বেশি চলে।  আপনি যেহেতু হোলেট/ টি স্টল এ মার্কেটিং করবেন তাই টেবিলের গ্রেড গুলো ফলো করুন।

কোন বিভাগে কোন চা চলে

কেমন দামের চা ক্রয় করবেন

আপনি উপরে আপনার এলাকার চায়ের স্টল পরিদর্শন করুন এবং চা পাতার দাম সমপর্কে জানুন। সেটার উপর নির্ভর করে আপনি চা পাতা ক্রয় করুন। আমরা তিন রকম ক্যাটাগরিতে চা পাতা বিক্রয় করে থাকি

  • বস্তা সহকারে চা পাতা বিক্রয়
  • রেডি ব্লেড এ চা পাতা বিক্রয়
  • নিজেস্ব প্যাকেট এ চা পাতা বিক্রয়

উপরের ৩ পদ্ধতিতে আমরা আমাদের কাস্টমারের সুবিধা অনুযায়ী চা পাতা বিক্রয় করে থাকি। যেন আমাদের প্রতিটি কাস্টমার ক্রয় করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং বিক্রয় করতেও সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

বস্তা সহকারে চা পাতা বিক্রয়

আমরা বিভিন্ন বাগানের চা পাতা নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করে তা বিক্রি করে থাকি। এর জন্য আমাদের দরকার হয় বিভাগীয় কাস্টমার,  যাহারা বস্তাসহকারে চা পাতা ক্রয় করে। এতে আমাদের দায়িত্ব ভাল বাগানের চা নির্বাচন করা এবং তা ভোক্তাদের কাছে পৌছে দেওয়া। ভোক্তারা চা পাতার বস্তা ক্রয় করে তাদের সুবিধেমত ব্লেড করে তাদের নিজেস্ব প্যাকেটে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে।

রেডি ব্লেন্ডের চা পাতা বিক্রয়

আমরা আমাদের কাস্টমারের সুবিধার্তে রেডি ব্লেন্ডের চা পাতা বিক্রি করি। একদিকে যেমন আমাদের কাস্টমারের রুচির মধ্যে থাকে তেমনি দামের নাগালেও থাকে। আর রেডি ব্লেডের চা পাতা আমরা বছরের সব সময় সমান কোয়ালিটি রাখার চেষ্টা করি। এর জন্য আমাদের নিজেস্ব টি টেস্টার ও ল্যাব রয়েছে। আমনা প্রতিটি রেডি ব্লেন্ডের চা ল্যাব টেস্ট করি। রেডি ব্লেন্ডের চা পাতা ক্রয় করে ভোক্তারা তাদের নিজেস্ব প্যাকেট এ প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে।

নিজেস্ব প্যাকেটে চা পাতার ডিলার দেই

অনেকেই আমাদের থেকে আমাদের রেবনল ব্রেন্ডের চা পাতার থানা ও জেলা ভিত্তিক ডিলার নিয়ে থাকে। আমাদের ডিলার নেওয়া মানে এই নয় যে আমরা বিক্রয় প্রতিনিধি দিব,  হ্যাঁ আমরা কিছু জায়গায় প্রতিনিধি দেই যারা আমাদের জামানত দিয়ে চা পাতার ডিলার নেয়। বেশিরভাগেই আমাদের থেকে পাইকারি দামে চা পাতা ক্রয় করে নিজেই মার্কেটিং করে আয় করে থাকে। আপনিও আমাদের থেকে পাইকারি দামে চা পাতা কিনে বিক্রি করতে পারবেন_ যদি আমাদের সেই এলাকায় কেউ চা পাতা নিয়ে কাজ না করে।

কেমন দামের চা ক্রয় করবেন

চা পাতার ব্যবসায় আর কি লক্ষ করবেন

চা পাতার ব্যবসায় অনেক কিছু লক্ষ করতে হয়। আর আপনি যদি সব কিছু মনিটরিং না করেন তাহলে পিছনে পড়ার সম্ভবানা বেশি রয়েছে। সব থেকে যে বিষয়টি বেশি লক্ষ করতে হবে তা হলো আপনাকে এই ব্যবসা প্রলোভন বা কম দামে চা পাতা কিনে বেশি লাভ করা যাবে না। আপনি ফেসবুক, ইউটিউব সহ নানা ব্লগে বিভিন্ন প্রলোভনমূলক পোস্ট দেখতে পারবেন, এগুলোর দিকে আপনি নজর দিবেন না বা এর ফাঁদ এ পড়বেন না। তাহলে আপনার ঝড়ে পড়ার আশংকা ৯৫% বেশি। আপনি ভাল মানের ও ভাল দামের চা পাতা ক্রয় করে বিক্রি করতে থাকুন। এভাবেই আপনি চলতে থাকবে ও আপনার পরিবার চলবে এবং পূজিঁও নষ্ট হবে না।

চা পাতার প্রশ্ন উত্তর পর্ব


আমি চা পাতার ব্যবসা কিভাবে শুরু করব?
– আপনি ভাল মানের ও ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে চা পাতা ক্রয় করুন। আর ভাল মানের চা ও ভাল ব্রেন্ডের চা কোথায় পাবেন তা পোস্ট পড়ে বুঝতে পেরেছে। চা পাতা সমন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে ব্লগটি পড়ুন।

আপনাদের কাছ থেকেই কি চা কিনতে হবে?
– আসলে একদমেই না।  আপনি যেখানে সব রকমের সুবিধে পাবেন সেখান থেকেই চা পাতা ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করুন। যেহেতু আমরাও ব্রান্ডিং করতেছি তাই আপনি আমাদের থেকেও নিতে পারেন অথবা পরামর্শ নিতেও অসুবিধে নেই।

আমি কি পারব চা পাতার ব্যবসা করতে?
– জ্বী অবশ্যই পারবেন !  যদি আপনি সব কিছু ঠিকঠাকমত গুছিয়ে তুলতে পারেন। আর কম দামের কথা চিন্তা করলে এ ব্যবসা না করাই উত্তম হবে।

শেষ কথা
আপনি চা পাতার ব্যবসা নয়,  যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে গভীর রিসোর্চ করতে হবে। আপনি যদি সঠিক রিসোর্চ না করেন তাহলে আপনি সঠিক তথ্য পাবেন না। আর আপনি আমাদের এই লেখা পড়ে যে সব রকম তথ্য পেলেন তাও ঠিক না। আপনি আরও পড়ুন বুঝুন জানুন, এরপর চা পাতার ব্যবসা শুরু করুন। আর আমাদের থেকে আরও তথ্য নিতে পারেন। সবাই ভাল থাকবেন শুভকামনা রইল।

চা পাতার পাইকারী বাজারCategoriesচা পাতার ব্যবসা চা পাতার মার্কেট

চা পাতার পাইকারী বাজার ও মার্কেট রিসোর্স

চা পাতার পাইকারী বাজার ও মার্কেট সমন্ধে আজ আপনাদের ধারনা প্রদান করব। যে বিষয়গুলো জানার পর আপনাদের চা পাতার ব্যবসা বা চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা করার সুবিধা হবে এবং চা পাতার পাইকারি বাজার সমন্ধে একটু হলেও আইডিয়া হবে। আপনি হয়তো জানেন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ও সিলেট। তাই সেখানে সব থেকে বড় বাজার,  আসলে বিষয়টি মোটেই সঠিক নয়। চা উৎপাদন ও বিপনন সমপূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশে সব থেকে বেশি চা উৎপাদন হয় মৌলভীবাজার জেলায়। আর চায়ের উৎপাদনের ২য় অবস্থানে রয়েছে পঞ্চগড় ও উত্তর অঞ্চলের জেলা ও চা উৎপাদনের ৩য় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। কিন্তুু চা বাগান চা উৎপাদন করার পর তা সরাসরি বিক্রি করতে পারে না। চা বিক্রি করার জন্য চায়ের নিলাম এ চা তুলতে হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এর লাইসেন্সপ্রাপ্ত চা ব্রোকার্স এর মাধ্যমে নিলাম সমপন্ন হয়।

বাংলাদেশের চায়ের পাইকারী বাজার কোথায়

বাংলাদেশের চায়ের পাইকারি বাজার বলতে সারাদেশেই বোঝায়। চায়ের নিলামে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক জেলার বিডারগন।  কিন্তুু বাংলাদেশে চায়ের নিলামকেন্দ্র ৩ টি রয়েছে। সেখানে প্রতি সপ্তাহে ও পনেরো দিন পর পর নিলাম সমপন্ন হয়। বাংলাদেশের চা নিলামকেন্দ্র সমূহ হল:

এখানে চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্রে প্রতি বুধবার চায়ের নিলাম সমপন্ন হয় শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড় চা নিলামকেন্দ্রে প্রতি মাসের প্রথম মঙ্গলবার ও বুধবার ও শেষ মঙ্গলবার ও বুধবার চায়ের নিলাম সমপন্ন হয়। বাংলাদেশে সর্বমোট এক্টিভ চা ব্রোকার্স রয়েছে ১৩ টি। তাদের মাধ্যমেই মূলত চায়ের নিলামগুলো সমপূর্ণ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের চায়ের পাইকারী বাজার কোথায়

চায়ের নিলামে অংশগ্রহন করে দেশের বিভিন্ন চায়ের বিডার্স, মূলত চায়ের বিডার্স হতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এর বিডার লাইসেন্স গ্রহন করতে হয় ও এ্যাসোসিয়েশন এর সদস্যপদ গ্রহন করতে হয়। তারপর আপনি চায়ের নিলাম এ অংশগ্রহন করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম চায়ের পাইকারি বাজার

বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন চায়ের পাইকারী বাজার হচ্ছে চট্টগ্রামে। সেখানে মূলত নিলাম হাউজ হওয়ার পর পরেই শত শত ব্যবসায়ী ও উদ্দ্যোক্তা তৈরী হয়েছিল। তারা চা ব্যবসাকে ঐতিহ্যের সহিত দেখে থাকে। বর্তমানে সব ব্যবসা অনলাইনে হওয়ার কারনে তেমন আগের অবস্থানে এই চা ব্যবসা নেই। তবে কিছু কিছু ভাল ও সৎ ব্যবসায়ী তারা এই চা ব্যবসাকে ধরে রেখেছে।

শ্রীমঙ্গল চায়ের পাইকারি বাজার

আমরা জানি বাংলাদেশের সব থেকে বড় চা উৎপাদনকারী অঞ্চল হচ্ছে মৌলভীবাজার।  চা উৎপাদনের কারনে ব্যবসায় সংস্কৃতিতে শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠেছে পাইকারি চায়ের বাজার। তবে এখানে সরাসরি বাগানের চা বলে কেউ বিক্রি করলে সমপূর্ণ ভুল হবে। কারন নিলাম ছাড়া চা বিক্রি করা অসম্ভব ও আইননত দন্দনীয় অপরাধ। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে শত শত পাইকারী চায়ের দোকান ও টি হাউজ। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের পাইকারি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে।

পঞ্চগড় চায়ের পাইকারি বাজার

সমতলের প্রবেশদ্বার সবুজ চায়ের সমাহার শ্লোগানেই বোঝা যায় পঞ্চগড়ে রয়েছে সমতলের চা। এখানেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্গানিক চা বিপিনবিহারী কাজি এন্ড কাজি টি এস্টেট ও গুনগতমানের টিভি এর চা উৎপাদনকারী এম এম টি এস্টেট অবস্থিত।  চায়ের ২য় উৎপাদন অঞ্চল হচ্ছে এই পঞ্চগড় সহ উত্তর অঞ্চলের সব জেলা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন চায়ের পাইকারি মার্কেট ও দোকান। এখান থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি চা বিক্রি করে থাকে।

কোথায় থেকে চা ক্রয় করলে লাভবান হবেন

কোথায় থেকে চা ক্রয় করলে লাভবান হবেন

আসলে চা ক্রয় করলেই হবে না। পাইকারি দামে চা ক্রয় করতে গেলে আপনাকে যে কোন জায়গা থেকেই চা ক্রয় করতে পারেন। এখন সারাদেশেই রয়েছে চায়ের বিডার্স।  যারা প্রতি সপ্তাহে নিলাম থেকে চা ক্রয় করে থাকে। আপনি যে কোন বিডার্স এর থেকে চা ক্রয় করুন। মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী চা ক্রয় করবেন। আপনি যেখান থেকে দাম কমে ও ভাল মানের চা পাবেন সেখান থেকেই ক্রয় করুন। আপনি আমাদের থেকেও ক্রয় করতে পারেন। 

চা পাতার গ্রেড সমূহ ও মার্কেটCategoriesচা পাতার ব্যবসা চা পাতার মার্কেট

চা পাতার গ্রেড সমূহ ও মার্কেট

চা পাতার গ্রেড সমূহ ও মার্কেট এর উপর জ্ঞান রেখে ব্যবসা করার নিয়ম

পানির পর পরেই অবস্থানে রয়েছে প্রাচীন পানীয় চা।  এই চা কে কেন্দ্র করে শত শত বছর ধরে চা পাতা নিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করে আসতেছে হাজার হাজার লোক ও প্রতিষ্ঠান। চায়ের রয়েছে অনেক চমকপ্রদ ইতিহাস,  আজ আপনাদের চায়ের ইতিহাস নিয়ে বলব না। আজ আমি চায়ের গ্রেড সমদ্ধে বলব ও বাংলাদেশে চায়ের গ্রেডিং এর উপর নির্ভর করে কিভাবে মার্কেটিং করবেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে চায়ের আবার গ্রেড হয় নাকি?  চা তো গরম পানিতে দিলে হয়ে যায়। আসলে এগুলো ধারনা একদমেই ভুল। চায়ের রয়েছে নানা রকমের গ্রেড।  কোনটা স্বাদ একরকম,  কোনটার কালার আরেক রকম আবার কোন চায়ের গন্ধ অনেক রকম। এখানে কালার স্বাদ বা বা ঘ্রাণ নিয়ে আলোচনা না হলেও অন্যরকম কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব।

চায়ের গ্রেড কথাটি শিরোনাম হলেও আপনি ভাবতে পারেন কোয়ালিটি নিয়ে। কোয়ালিটি ঠিক চা পাতার গ্রেড এ পড়ে।  তবে আপনাদের বোঝার সুবিধার্তে একটা কথা বলতে চাই ভালদামের চায়ের দাম সব সময় ভাল আবার খারাপ চায়ের দাম সব সময় কম। আবার প্রশ্ন আসতে পারেন যে বড় দানার চা ভাল নাকি ছোট দানার চা ভাল?  আসলে আমি মূলত এই কথাটির উত্তর উপরে বলেছি যে বড় দানার চা হোক বা ছোট দানার চা হোক…  দাম যার একটু বেশি মান তার একটু ভাল । এখানে বড় দানার চা আর ছোট দানার চায়ের কোন পার্থক্য নেই।

তাহলে চায়ের গ্রেড কি আবার?
মূলত আমি চা পাতার সাইজ কে গ্রেড হিসেবে চিন্হিত করে এই লেখাটি লিখে দিয়েছি, আশাকরি চা পাতার গ্রেড সমন্ধে আপনার ধারনা আসবে।

Tea Grade in Bangladesh

চা বাগানের বৈজ্ঞানিক নাম ও গ্রেড

প্রাচিন আমল থেকে চা বাগানে বা চা ফ্যাক্টরিতে চায়ের বিভিন্ন সাইজ ও গ্রেড আকারে প্রডাকশন করা হয়,  তার ভিন্ন রকম নাম থাকে ও ঐ নামকেই গ্রেড বলে।  আমি বিশ্বের চায়ের গ্রেড নিয়েও আলোচনা করব না,  আমি আমাদের দেশের চা পাতার প্রচলিত গ্রেড নিয়ে আলোচনা করব। যা আপনার বুঝতে সুবিধে হবে। আমাদের দেশে সব থেকে বেশি গ্রেডের প্রচলিত নাম হচ্ছে সিটিসি মেশিন দিয়ে তৈরি 

Tea Grade List

  • FBOP
  • BOP
  • GBOP
  • GOF
  • OF
  • PF
  • PD
  • DM
  • RD
  • DUST
  • CD

উপরে FBOP হচ্ছে সব থেকে বড় Dust হচ্ছে সব থেকে ছোট ( চায়ের গুড়া) । এমনকি পাউডার জাতীয় চা রয়েছে সেখানে,  CD হচ্ছে পাউডার জাতীয় চা।

মূলত এই চায়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কোম্পানী ও ব্রান্ড চা পাতার প্যাকেটজাত করে ব্লেন্ডার গণ চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা করে থাকে।  এগুলো আবার দেশের অঞ্চলভিত্তিক প্রচলিত চা।  বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রেড এর চা পাতা চলে বলে একটি সচ্চল ব্রেন্ডিং চা সেলারদের এই গ্রেডগুলো জানা একান্তই অবশ্যক।  এছাড়া যারা চা পাতার ডিলার নিবেন বা পাইকারি দামে চা পাতার কিনে এলাকায় বিক্রি করবেন তাদেরও এই চায়ের গ্রেড জানা প্রয়োজন।  নাহলে আপনার এলাকায় CD Dust চা চলে,  আর আপনি কিনলেন BOP  Tea তাহলে তো হবে না!  কারন আপনার এলাকার দোকানীরা Cd Dust চা পাতা ব্যবহার করে। তাই আপনাকে যেমন চায়ের গ্রেড জানা দরকার ঠিক তার থেকে বেশি জানা দরকার আপনাকে যারা চা পাতা দিবে। নাহলে আপনি লস এ পরিনত হবেন। তাই এই বিষয়গুলো আপনাকে চা পাতার ব্যবসা করার আগেই জেনে নিতে হবে।

বাংলাদেশের মার্কেট এ কোন গ্রেডের চা বেশি প্রচালিত

চায়ের রয়েছে নানা ধরনের গ্রেড ও কাটিং,  তবে বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক সব ধরনের গ্রেডের চা চলে। চায়ের গ্রেডগুলো আগে আপনাকে ভালভাবে মুখস্ত করে নিতে হবে। চা ব্যবসা করার আগে আমাদের দেশের গ্রেডগুলো আগে চিনুন। তার পর মার্কেটে নেমে পড়তে পারেন চা ব্যবসা করতে।

বাংলাদেশে যে সকল গ্রেডের চা বেশি  চলে:

  • FBOP – Flowery Broken Orange Pekoe
  • BOP – Broken Orange Pekoe
  • GBOP – Golden Broken Orange Pekoe
  • GOF – Golden Orange Fannings
  • FOF – Flowery Orange Fannings
  • OF– Orange Fannings
  • PF– Pekoe Fannings
  • PD- Pekoe Dust
  • RD- Read Dust
  • Dust- Dust
  • CD – Churamuni Dust

এই গ্রেডগুলো ছাড়া আপনি চা ব্যবসা করতে পারবেন না। এখন আপনি গ্লোবালি চায়ের গ্রেডগুলো এক নজরে দেখে নিতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন চা চলে সে নিয়ে একটা লেখা পড়ে ধারনা নিতে পারেন।

এ ছাড়া চা পাতার মুল গ্রেড সমূহ হল

চা পাতার গ্রেড সমূহ বিভিন্ন মান ও গুণমানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। নিম্নলিখিত হলো চা পাতার প্রধান গ্রেড সমূহ:

১. অরেঞ্জ পেকো (Orange Pekoe – OP)

অরেঞ্জ পেকো হল উচ্চ মানের চা পাতার একটি গ্রেড, যা সাধারণত পুরো পাতা থেকে তৈরি হয়। এটি সাধারণত হালকা এবং সুগন্ধিযুক্ত চা তৈরি করে।

সম্পূর্ণ পাতার চা Whole leaf tea:

  • FTGFOP1 – Fine Tippy Golden Flowery Orange Pekoe Grade 1
  • FTGFOP – Fine Tippy Golden Flowery Orange Pekoe
  • TGFOP – Tippy Golden Flowery Orange Pekoe
  • TGFOP1 – Tippy Golden Flowery Orange Pekoe Grade One
  • GFOP – Golden Flowery Orange Pekoe
  • FOP – Flowery Orange Pekoe
  • OP – Orange Pekoe
  • OPA – Orange Pekoe A
  • FP – Flowery Pekoe
  • P – Pekoe
  • S – Souchong

২. ব্রোকেন অরেঞ্জ পেকো (Broken Orange Pekoe – BOP)

ব্রোকেন অরেঞ্জ পেকো হল অরেঞ্জ পেকো পাতা ভেঙে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত বেশি শক্তিশালী এবং দ্রুত মিশ্রিত চা তৈরি করে।

আংশিক ছেঁড়া পাতার চা Broken-leaf tea:

  • BOP1 – Broken Orange Pekoe One
  • GFBOP – Golden Flowery Broken Orange Pekoe
  • TGFBOP – Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe
  • TGFBOP1 – Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe Grade One
  • BS – Broken Souchong
  • BPS – Broken Pekoe Souchong
  • GBOP – Golden Broken Orange Pekoe
  • FBOP – Flowery Broken Orange Pekoe
  • BOP – Broken Orange Pekoe

৩. ফ্যানিংস (Fannings)

ফ্যানিংস হল ছোট ছোট চা পাতা, যা সাধারণত টি ব্যাগে ব্যবহৃত হয়। এটি খুব দ্রুত মিশ্রিত চা তৈরি করে এবং সাধারণত শক্তিশালী হয়।

অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ছেঁড়া যা Fannings নামে পরিচিত

  • GOF – Golden Orange Fannings
  • FOF – Flowery Orange Fannings
  • BOPF – Broken Orange Pekoe Fannings
  • FBOPF – Flowery Broken Orange Pekoe Fannings
  • OF– Orange Fannings
  • PF– Pekoe Fannings

৪. ডাস্ট (Dust)

ডাস্ট হল সবচেয়ে ছোট চা পাতার কণা, যা সাধারণত বাণিজ্যিক চা ব্যাগে ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রুত মিশ্রিত হয়ে শক্তিশালী চা তৈরি করে।

গুড়া বা (Dust) ডাস্ট চা এগুলো থেকেই টি-ব্যাগের উৎপত্তি

  • OPD – Orange Pekoe Dust
  • BOPD – Broken Orange Pekoe Dust
  • BOPFD – Broken Orange Pekoe Fine Dust
  • FD – Fine Dust
  • D-A – Dust A
  • Spl. D – Special Dust
  • GD – Golden Dust
  • OD – Orthodox Dust
  • PD– Pekoe Dust
  • RD– Read Dust
  • Dust– Dust
  • CD – Churamuni Dust

৫. গোল্ডেন টিপস (Golden Tips)

গোল্ডেন টিপস হল চা পাতার সোনালী রঙের অঙ্কুর, যা খুবই উচ্চ মানের এবং সুগন্ধিযুক্ত চা তৈরি করে।

৬. সিলভার টিপস (Silver Tips)

সিলভার টিপস হল চা পাতার সাদা রঙের অঙ্কুর, যা খুবই উচ্চ মানের এবং মৃদু স্বাদের চা তৈরি করে।

৭. টি গার্ডেন গ্রেড (Tea Garden Grades)

টি গার্ডেন গ্রেড হল চা বাগান ভিত্তিক গ্রেড, যা বিভিন্ন বাগানের বিশেষ মানের চা পাতা নির্দেশ করে।

চা পাতার এই গ্রেড সমূহ বিভিন্ন মান ও স্বাদের চা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। গ্রেড অনুযায়ী চা পাতার মান ও স্বাদ পরিবর্তিত হয়।

চায়ের কোন গ্রেড নিয়ে ব্যবসা করব?

আপনার এলাকায় কোন গ্রেডের চা চলে তা দেখে নিয়ে ব্যবসা করবেন। টং দোকান হোটেল ও আপনার এলাকার মুদি মালের দোকানগুলো আগে পর্যবেক্ষণ করুন। তারপর আপনি একটি ভাল প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ডিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন। অথবা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর থেকে আপনার এলাকায় কোন চা চলে তার পরামর্শ নিন।  এরপর তাদের সাথে ব্যবসা শুরু করে দিন।

বাসা বাড়ি কিংবা অফিসের জন্য কোন গ্রেডের চা চলে?

বাসা বাড়ি কিংবা অফিসের জন্য মূলত গুটি দানার চা যেমনঃ BOP, GBOP.  OF এই ধরনের চা বেশি চলে। আমার এগুলো চায়ের মধ্যে Tea Gold ,  BT-2 ,  Clone নামে বেশি পরিচিত।  এই চাগুলো যেমন স্বাদে ভরপুর তেমন কালার ও তেমন ঘ্রাণ।  আপনি এই ধরনের চা নিয়ে বাসায় খেতে পারেন বা আপনি এই চাগুলো নিয়ে বাসা বাড়ির জন্য ব্যবসা করতে পারেন।

বিশেষ করে নারি উদ্দ্যোক্তারা এসকল চা পাতা নিয়ে অনায়েসে ভালভাবে ব্যবসা করতে পারবেন,  যদি আপনাদের মার্কেটিং পরিচিতি ভাল থাকে। আপনি এই চায়ের জন্য Tea Shop এর সাথে যোগাযোগ করে পাইকারি দামে ক্রয় করে বিক্রি করতে পারেন।

চা সমন্ধে বা চায়ের গ্রেড সমন্ধে আপনাদের একটু হলেও ধারনা দিতে পেরেছি। তবে আপনি উপরক্ত পোস্ট এ চায়ের গ্রেড বলতে দাম নিয়ে বিবেচনা করবেন না। মূলত চায়ের সাইজ নিয়ে কথা হয়েছে। আপনি চা পাতার বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন। 

আগামী পোস্ট এ চা পাতার ব্যবসার ঝুঁকি সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে। কিভাবে চায়ের ব্যবসায় একজন নতুন উদ্দ্যোক্তা মার্কেট গুছিয়ে উঠতে পারে ও কিভাবে একজন চা উদ্দ্যোক্তা মার্কেট থেকে ঝড়ে যেতে পারে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ লেখা পাবেন।