চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা এর পদ্ধতি রয়েছে। চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা বলতে এই নয় যে শুধুমাত্র প্যাকেট বিক্রি। চা ক্রয় করে ব্লেন্ড করে তা মোড়কজাত করে বিক্রি করাকে এই আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে বুঝাতে চাচ্ছি। আশাকরি আপনি লেখাটি পড়লে চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা সমন্ধে একটু ভাল ধারনা আসতে পারে।
কিভাবে চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা শুরু করবেন
আপনি যদি চা পাতার ব্যবসায় নতুন হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমে এই রিক্সটি না নেওয়াই উত্তম। কারন চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে আগে চা সমন্ধে ভাল ধারনা ও জ্ঞান রাখতে হবে। এছাড়া আপনাকে টার্গেট লোকেশন এর মার্কেটিং চায়ের মার্কেট রিপোর্ট সমন্ধে বিশাল এ্যানালিষ্ট করতে হবে। তবে আপনি যদি ধারনা রেখে চায়ের প্যাকেট ও ব্রান্ডিং করে মার্কেট এ নামতে চান তাহলে আপনাকে স্বাগতম। এটা এক পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ এর মত। ইতি মধ্যেই অনেক টি হাউজ ও চা কোম্পানী মার্কেট এ নেমে রয়েছে। তাই আমি বলতে চাই আপনি প্রথমে মার্কেট রিসোর্চ করুন ও কোথাও থেকে কোন ব্রান্ড এর ডিলারশীপ নিয়ে কাজ করুন। যদি মনে করেন আপনি এ ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে পারবেন তাহলে আপনি মার্কেট এ আপনার ব্রান্ড নিয়ে আসুন তাহলে আপনি একজন সফল উদ্দ্যোক্তা হতে পারবেন। আর চায়ের ব্যবসা কোন আবেগ দিয়ে চলে না। কারন আপনি যাদের সাথে ব্যবসা করতে যাচ্ছেন তাদের স্ট্যাটাস সমন্ধে একটু ধারনা নিন ও গবেষনা করুন।
চা পাতার প্যাকেট ব্যবসার সব থেকে গুরত্ব কি
চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা এর সব থেকে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল চা পাতার গ্রেড ও ব্লেন্ডিং ধারনা রাখা ও মার্কেট ও কাষ্টমার অনুযায়ী চায়ের ব্লেন্ড করে বিক্রি করা। সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে আপনাকে মার্কেটের থেকে কম দামে ভাল কোয়ালিটির চা সাপ্লাই দেওয়া। আপনি যদি উপরের দুটি কাজ সঠিকভাবে পালন করে মার্কেটিং করেন তাহলে আপনি টিকতে পারবেন। মনে রাখবেন আপনার অজান্তেই শত শত উদ্দ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে আবার মার্কেট থেকে ঝড়ে যাচ্ছে। তার মানে আপনার কম্পিটিটর এর সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন চলতে হবে। এছাড়া আপনার ব্রেন্ড ভ্যালু বাড়াতে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হবে ও নতুন নতুন অফার প্রদান করতে হবে।
চা পাতার প্যাকেট ব্যবসা শুরু করতে কি কাগজ লাগে
আপনি ধাপে ধাপে কাগজগুলো ফিলআপ করবেন ও লাইসেন্স গ্রহন করবেন। আপনাকে চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে নিম্নের এসকল কাজ লাগবে।
- খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স
- বিডার লাইসেন্স
- ব্লেন্ডিং লাইসেন্স
- বিএসটিআই সার্টিফিকেট
- ট্রেডমার্ক, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইত্যাদি
এই লাইসেন্সগুলো বাংলাদেশ চা বোর্ড এ আবেদন করে নিতে হয় ও বিএসটিআই অফিস থেকে নিতে হয়। এছাড়া আপনার ফয়েল প্যাকেট ডিজাইন, প্রিন্ট সিলিন্ডার ও প্যাকেট নিতে হয়। এর জন্য ঢাকায় চা পাতার প্যাকেট এর প্যাকেজিং কোন কোম্পানী থেকে করে নিতে পারেন।
কোথায় থেকে চা কিনে প্যাকেট করবেন
আপনি চায়ের অকশন মার্কেট থেকে চা নিলামের মাধ্যমে নিতে পারেন। নিলামের মাধ্যমে চা ক্রয় করতে হলে আপনাকে চা সমন্ধে খুব ভাল ধারনা রাখতে হবে। কারন এখানে লট হিসেবে চা ক্রয় করতে হবে। একটু অন্যরকম হলে আপনি বড় লোকশানে পড়ে যেতে পারেন। এবং চা কেনার আগে আপনাকে মার্কেট ও রেসুও মাথায় রেখে চা ক্রয় করতে হবে, এছাড়া প্রতি সময়ে চায়ের নিলাম বাজারদর আপ ও ডাউন হয়। আর যদি আপনি রিক্স ফ্রি হয়ে চা ক্রয় করতে চান, তাহলে আপনাকে কোন চা বিডার্স এর সাথে সমন্বয় করে আপনার চাহিদা অনুযায়ী চা ক্রয় করতে পারেন। এতে কিছুটা হলেও ফ্রি থাকবেন, আপনি যখন দেখবেন আপনার মার্কেট বড় হয়েছে ও চা সমন্ধে ভাল ধারনা অর্জন করতে পেরেছেন তখন আপনি চায়ের অকশন থেকে চা পাতা ক্রয় করুন। বলাবাহুল্য যে_ অনেকেই চা ব্যবসা তাদের দাদার ব্যবসা করতেছে। তাই এখানে আবেগ নিয়ে কখনো এই চা পাতার ব্যবসা হয় না ও হবেও না।
চা পাতার প্যাকেট ব্যবসার ঝুঁকি সমূহ কি
প্রত্যেক ব্যবসাতেই লাভ যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি ঝুঁকি রয়েছে। চা পাতার ব্যবসাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনি চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে আগে ঝুঁকি সমূহ ভালভাবে এ্যানালিষ্ট করুন। সব থেকে এই ব্যবসায় বড় ঝঁকি হচ্ছে গুনগতমান বজায় রাখা এর পর পরেই রয়েছে মার্কেট এ বড় একটা পুঁজি ফেলে রাখা। অনেকেই বলে যে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকায় মাসে অনেক টাকা ইনকাম করা যায়। আসলে এটা সমপূর্ণ ভূল ধারনা। চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অনেক পূঁজি খাটাতে হবে। এছাড়া কোয়ালিটি বজায় রেখে মার্কেটিং করতে হবে। তা নাহলে গ্রহক চা খেতে খেতেই আপনার বদনাম গাইবে ও টাকা দিবে না। বুঝেন তো এটা বাংলাদেশ।
চা পাতার প্যাকেট ব্যবসার সঠিক গাইডলাইন
চা পাতার ব্যবসা করতে হলে আপনাকে আগে চা সমন্ধে ভাল ধারনা নিতে হবে। চা ক্রয় করার সোর্চিং জানতে হবে ও যাদের থেকেই চা পাতা ক্রয় করেন না কেন তারা যেন সৎ ও যোগ্য হয় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে আস্তে আস্তে মার্কেট এ বিস্তার করতে হবে। মনে রাখবেন চা পাতা কিনতেই আপনাকে লাভ করতে হবে। চা পাতার বস্তার স্টক রাখতে হবে। ব্লেন্ডিং করার জন্য রেসিও করে নিতে হবে। আপনি এই ব্যবসায় নেমে পড়লে আরও কিছু সমস্যা ফেস করতে পারেন। ঠান্ডা মাথায় মার্কেট অনুযায়ী আপনি সেগুলো সমাধান করবেন। ইনশাআল্লাহ্ আস্তে ধিরে আপনার মার্কেট প্রসারিত হবে। প্রাথমিক অবস্থায় আপনাকে দৈনিক ২০ কেজি চা পাতা বিক্রি করার টার্গেট নিতে হবে। হয়তো প্রথম কয়েকদিন কষ্ট হবে, কিন্তুু কোয়ালিটি ঠিক থাকলে আপনি সাকসেস এর দিকে অগ্রসর হবেন।
শেষ কথা
আসলে লেখাটি পড়ে ভয়ের কিছু নেই, আমরা বাস্তব অবিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্য এই আর্টিক্যালটি লিখেছি। হয়তো কিছু কথা তেতোঁ লাগতে পারে। তবে মনে রাখবেন আপনি চ্যালেন্স গ্রহন করলেন তো সাকসেসের দিকে অগ্রসর হলেন। বিশ্বে এই চা পাতার ব্যবসা মানুষেই করতেছে এটাই মাথায় রাখবেন। আপরি কেন পারবেন না এই জিদ নিয়েই শুরু করুন। আর যদি কোন পরামর্শ বা জানার ইচ্ছে পোষণ করেন তাহলে আমাদের দরজা সব সময় খোলা। পরিশেষে সবাইকে চা পাতার ব্যবসায় স্বাগতম ও দোয়া রইল।